সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতনের কারণে রায়হান আহমদ (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অবশ্য তার মুক্তির জন্য ভোররাতে ফোন করে পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকাও চাওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
তবে পুলিশ দাবি করছে, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। অবশ্য পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া অ্যন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) জ্যোর্তিময় সরকার।
নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। তিনি দুই মাসের এক কন্যা সন্তানের জনক। দুই বছর ধরে তিনি সিলেট জেলা স্টেডিয়াম মার্কেটের চিকিৎসক ডা. আবদুল গফ্ফারের চেম্বারে সহকারির কাজ করছেন। শনিবারও (১০ অক্টোবর) তিনি গিয়েছিলেন কর্মস্থলে। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় তার ফোনে কল দিলে বন্ধ পান তা মা ও স্ত্রী। এরপর ভোরে তাকে ফাঁড়িতে আটকে রাখার খবর পান তারা।
হাবিবুল্লাহ জানান, সকালে পৌনে ১০টার দিকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ফাঁড়িতে গেলে পুলিশ বলে রায়হান অসুস্থ। ওসমানী মেডিকেলে যান। এরপর মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে এসে দেখেন রায়হানের লাশ হিমাগারে রাখা|’
তিনি দাবি করেন, ‘রায়হান কোন অপরাধে জড়িত নয়। পুলিশ নির্যাতন করেই তাকে হত্যা করেছে।’
রায়হানের মা সালমা বেগম আহাজারি করে বলছেন, ‘পুলিশে আমার ফুয়ারে (ছেলেকে) নিয়া মারিলাইছে। বিনা দোষে আমার ফুয়ারে যতো মাইর মারছে। আমার ফুয়ায় কোনো অপরাধ করছে না। একমাত্র ঘুষর টেখার লাগি আমার ফুয়ারে পুলিশে মারিলাইলো, আমার বুক খালি করিলাইলো। এখন তার ২ মাসর বাচ্চায় কিতা করবো। তার বউয়ে কিতা করবো। আমি কিতা করতাম….’
তিনি বলেন, ‘রায়হানকে এলাকার সবাই পছন্দ করতো। তার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু পুলিশ কেন তাকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলো?
তিনি বলছেন, ‘যদি আমার ছেলে জনতার হাতে মার খেতো তবে তার চেহারা বা বুকে-পিঠে আঘাতের দাগ থাকতো। কিন্তু আমার ছেলের বুক-পিঠ এবং চেহারা সম্পূর্ণ অক্ষত। শুধু হাটুর নিচের মারধরের দাগ এবং হাতের আঙ্গুল ও নখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শুনেছি, পুলিশ নির্যাতন করলে নাকি এসব স্থানেই আঘাত করে।’
এদিকে ময়নাতদন্তের পর বিকেলে স্বজনদের কাছে রায়হানের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর ‘পুলিশি নির্যাতনে’তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধও করেন। পরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা সড়ক থেকে সরে যান।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, ‘রায়হান ভালো ছেলে। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় জনসাধারণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হোক। সুষ্ঠ বিচার হোক।’
এ ঘটনায় তদন্ত চলছে জানিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া অ্যন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কারও কোন গাফিলতি থাকলে বা পুলিশের কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।’
এদিকে, রোববার (১১ অক্টোবর) এশা’র নামাজের পর আখালিয়া জামে মসজিদে রায়হানের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে তাকে। জানাযায় স্থানীয় কাউন্সিলর, জনসাধারণ এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা অংশ নেন। এসময় রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিও করা হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..