নতুন লাইসেন্স নিয়ে কর ফাঁকির মাধ্যমে নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে নিম্নমানের বিড়িতে সয়লাব হয়ে গেছে রংপুরের হাট-বাজার। এতে করে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে এলাকার হতদরিদ্র কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ নিম্নমানের বিড়ি পান করে শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাস্টম্স ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কতিপয় অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ীর কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলা প্রশাসন র্যাবের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হারাগাছের মেনাজ ও পদ্মা বিড়ির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৬৫ হাজার ১শ’ পিস নকল ব্যান্ডরোল ও নগদ ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় হারাগাছ থানার দালালহাট সাবানটারী এলাকার আবুল মকদুমের ছেলে এএইচএম মাহমুদ হাসান ওরফে ডনকে গ্রেপ্তারসহ মামলা করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিড়ি শিল্প এলাকাখ্যাত রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা। এক সময় এখানে সরকারের নিবন্ধিত ২০ থেকে ২৫টি কারখানায় ৩ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করতো।
পৌরসভায় বসবাসকারী প্রত্যেক পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। ফলে বিড়ি প্রস্তুতকরণই ছিল তাদের রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন। সরকার তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করতে এ শিল্পের পণ্যের ওপর প্রতি বছরই করারোপ বৃদ্ধি করতে থাকে।
এতে করে বিড়ির উৎপাদন খরচের পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্সও বেড়ে যায়। বিগত সময়ে সরকার সরেজমিন প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিড়ি কারখানাগুলোর নানাদিক ও কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে বিড়ি কারখানা স্থাপন, বিড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের লাইসেন্স প্রদান করত। গত ৩ বছর ধরে সরকার অনলাইনের মাধ্যমে বিড়ি কারখানা চালুর জন্য লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। এতে করে হারাগাছসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ছোট ছোট বিড়ি কারখানা গড়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে নতুন গড়ে উঠা নিম্নমানের বিড়ি কারখানা হারাগাছের আশিক বিড়ি, সরিফা বিড়ি, আশা বিড়ি, আজিম বিড়ি, বকুল বিড়ি, রাশেদা আশা বিড়ি, তারেক বিড়ি, হামিদ বিড়ি, রাশেদ বিড়ি, আব্দুল হালিম বিড়ি, মামুন বিড়ি, হক বিড়ি, পাখি বিড়ি, প্রাণ বিড়ি, সুলতান বিড়ি, সাহেব বিড়ি, মানিক বিড়ি, জামাল বিড়ি, শিমুল বিড়ি, বাংলা বিড়ি, সেলিম বিড়ি, নিউ আশা বিড়ি, এনতাজ বিড়ি, সাগর বিড়ি, বাদল বিড়ি, ফেন্সি বিড়ি, মিরাজ বিড়ি, আবুল বিড়ি, দুলাল বিড়ি, গ্রাম বাংলা বিড়ি, রাঙ্গা বিড়ি, বুলেট বিড়ি, তুফান বিড়ি, আপন বিড়ি, ফ্রেস বিড়ি, রত্না বিড়ি, আটো বিড়ি, তৈয়ব বিড়ি, বিউটি বিড়ি, রবি বিড়ি, গাইবান্ধার ঢোল ডাঙ্গার সুন্দর বিড়ি, মোমিন বিড়ি, সুন্দরময় বিড়ি, আনিছ বিড়ি, বাসুদেবপুরের রাদিদ বিড়ি, সাদুল্ল্যাপুরের আনিছার বিড়ি, গাইবান্ধার মধু বিড়ি, শাকিল বিড়ি, ফুটবল বিড়ি, কাজল বিড়ি, বগুড়া সোনাতলার আকিব বিড়িসহ অন্যরা সরকারের বেঁধে দেয়া এক প্যাকেট বিড়ির মূল্য ১৪ টাকা নির্ধারণ হলেও তারা কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে। ৪০ প্যাকেটে ১ হাজার শলাকার দাম পড়ে ৫৬০ টাকা। অসাধু বিড়ি মালিকরা ১৬০ থেকে ৩২০ টাকা দরে ১ হাজার শলাকা বিড়ি বাজারে তাদের নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে বিক্রি তৈরি করছেন।
বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, হারাগাছে ক্যাসিনো স্টাইলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে । ব্যান্ড রোল ফাঁকি, ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে সব নতুন লাইসেন্স ধারী বিড়ি কারখানার মালিকরা । প্রশাসনের সর্বস্তরের অসাধু কর্মকর্তারা এই রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ভাগ পাচ্ছে। রংপুর জেলা বিড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, অনৈতিকভাবে বিড়ি বাজারজাত করা ছোট বিড়ি কারখানা মালিকরা বছরে প্রায় ৫’শ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। অনেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা পরিচালনা করছে ।
এ ব্যাপারে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, নকল ব্যান্ড রোল দিয়ে বিড়ি বাজারজাতকরণের বিষয়টি সত্য। ইতিপূর্বে আমরা অভিযান পরিচালনা করে নকল ব্যান্ডরোল উদ্ধার করেছি। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।